,

লোহাগড়ায় ভাঙছে নদী, কাঁদছে মানুষ

জেলা প্রতিনিধি, নড়াইল: ‘ও আল্লাহ আমরা কি করবো, চোখের সামনে সব ভাইসে গ্যালো। কোহানে যাব, কি করব। কেউ আমাগে দ্যাখে না, খবর নেয় না। মরা ছাড়া আমাগে কোন উপোয় নাই। সংম্বাদিকরা আসে কিছু করতি পারে না।’ সাংবাদিকদের দেখে এভাবেই নদীরপাড়ে বসে বিলাপ করছেন ষাটোর্ধ্ব বিলকিস বেগম।

আগুনে পুড়লে ভিটা থাকে। নদীতে ভাঙলে কিছুই থাকে না। এমন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন বিলকিস বেগম। চোখের সামনে ভেসে গেছে তার সাজানো-গোছানো সংসার। সব হারিয়ে আহাজারি করে দিন কাটছে বিলকিস বেগমের। তার মতো সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই।

বর্ষার শুরু থেকেই নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চরসুচাইল ও চরপরানপুরে মধুমতি নদীতে শুরু হয়েছে ভাঙন। বছরের পর বছর ধরে এ নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে শত শত একর ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট গাছপালা, বসতভিটা ও কবরস্থান। উপজেলার মানচিত্র থেকে ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছে নদীপারের গ্রামগুলো।

ভাঙনের ঘর-বাড়ি হারিয়েছেন ইয়াছিন মুন্সী, টলিন মুন্সী, জাহাঙ্গীর মুন্সী, জামাল, কালাম, জসিম, আবু সাইদ, নাজমুল, লিবু মুন্সী, শরিফুল, নীহার বেগম, নাসিম, মিজান, মিরাজ, ইরানসহ অর্ধশতাধিক পরিবার। সহায় সম্বল হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন কেউ কেউ। এখনও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে ওই এলাকার প্রায় ৩০টি পরিবার ও বহু ফসলি জমি। আতংকে নির্ঘুম রাত কাটছে ওই এলাকার মানুষের।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বছরের পর বছর ভাঙলেও খোঁজ নেয়নি কোন জনপ্রতিনিধি, ব্যবস্থা নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো।

চরসুচাইল গ্রামের কালাম মুন্সী (৫৫) বলেন, ‘আমরা পূর্বপুরুষের ভিটায় বংশপরম্পরায় বসবাস করে আসছি। নদী ভাঙনে বাপ-দাদার সেই ভিটেমাটি হারিয়ে এখন নিঃস্ব। এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। চেয়ারম্যান-মেম্বার কেউ আমাদের খবর নেয়নি।’

একই গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গরীর মানুষ। দিনমজুরের কাজ করে খাই। নদীতে যেভাবে জায়গা-জমি ভাঙছে, তাতে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। কিছুদিন পর আমাদের বসতভিটাও ভেঙ্গে যাবে নদীতে। ছেলেমেয়ে, স্ত্রী নিয়ে কোথায় যাব, কি খাব? ভাঙন রোধে কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ভাঙন প্রতিরোধে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ স্থানীয় এমপি সাহেবের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’

নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী স্বপন কুমার জানান, যেসব এলাকায় জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সেখানে জরুরী ভিত্তিতে বালুর বস্তা ফেলে (জিও ব্যাগ) ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া নদী ভাঙনের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

-লিয়াকত হোসেন লিংকন

 

এই বিভাগের আরও খবর